সকালে ঘুম থেকে উঠা শুরু করে গভীর রাত অব্দি। কোন কারণে বা অকারণে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আমরা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকি।শুধু যে ব্যক্তি হিসেবে আমরা ব্যবহার করি তা কিন্তু না আমাদের প্রায় সকল কাজেই কিন্তু ইন্টারনেটের ব্যবহার দেখা যায়। স্কুল- কলেজ, অফিস- আদালত সব সেক্টরেই ব্যবহৃত হয়। যার সাথে এত মিশে থাকা, এত গভীর প্রেমের সম্পর্ক সেই জিনিস সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। কিন্তু এরকমটা তো হওয়ার কথা না ! আপনার ব্যবহার করা জিনিসের সম্পর্কে আপনাকে জেনে রাখা প্রয়োজন। আপনি যদি চান আপনার ব্যবহার করা জিনিসটি সম্পর্কে জেনে রাখতে তাহলে আজকের পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন। কেননা,আজ আমি আপনাদের কে বলতে চলছি - ইন্টারনেট কি, কিভাবে কাজ করে ও এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে। আশা করি নতুন কিছু জানতে পারবেন....
What is the Internet - ইন্টারনেট কি ?
ইন্টার + নেট এই দুটি শব্দের সমষ্টি ইন্টারনেট। ইন্টার শব্দের অর্থ হলো - আন্তঃ ও নেট শব্দের অর্থ হলো - জাল। তাই ইন্টারনেট অর্থ হলো - আন্তঃজাল। এই জাল জেলেদের জালের মতো স্বাভাবিক কোন জাল নয়। এটি একটি অদৃশ্য জাল। যার মধ্যে কোটি কোটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। ইন্টারনেট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ক্ষেত্র যেখানে IP বা Internet Protocol ব্যবহার করে যেকোন ডাটা আদান-প্রদান করা হয়। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকুন না কেনো ইন্টারনেটের আওতায় থাকলে তা আপনাকে তথ্য আদান-প্রদান মূহুর্তের মধ্যে করে দিবে।
How The Internet Works - ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে ?
পূর্বে জেনেছি যে ইন্টারনেট জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশ্বব্যাপি রয়েছে। ইন্টারনেট PR বা Pocket Routing Network ব্যবহার করে কাজ করে। যা মূলত IP বা Internet Protocol ও TCP বা Transport Control Protocol এর মাধ্যমে সংযুক্ত।
আমাদের হাতে থাকা মোবাইলের জন্য যেমন আলাদা আলাদা নাম্বার থাকে তদ্রূপ প্রতিটি কম্পিউটারের জন্যও Unique Identity থাকে।যাকে আমরা IP বা Internet Protocol বলে থাকি। একটি কম্পিউটারের IP Address অন্য একটি কম্পিউটারে IP address এর সাথে কোন মিল থাকে না। যখন কোন কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য আমরা সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করি তখন আমাদের তথ্যটি বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে তা আমাদের সামনে হাজির হয়। এমনটি কেন হয় জানেন কি ? এমনটি হওয়ার কারণ ইন্টারনেট সার্ভারে সকল কম্পিউটার একে অপরের সাথে যুক্ত থাকা।
ইন্টারনেটের কাজ সঠিকভাবে হওয়ার জন্য তাকে Global Network এর সাথে Wire বা Wireless এর মধ্যে কানেক্ট থাকতে হয়। Global Network এর সাথে জড়িয়ে থাকা কোন কম্পিউটার থেকে ডাটা সংগ্রহ করার জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় Router ও Server। রাউটার ও সার্ভারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে আমরা যে কোন ডাটা সংগ্রহ করি।
ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করার জন্য বা পরিচালনা করার জন্য প্রদান তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। যথা -একটি ডিভাইস যা দিয়ে ইন্টারনেটে প্রবেশ করা যায়।
ISP বা Internet Service Provider এর কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করা।
Web Browser বা যেকোন সার্চ ইঞ্জিন সম্বলিত Application।
ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে কোন ধরনের ডিভাইস প্রয়োজন ?
ইন্টারনেটে প্রবেশ করার জন্য আমাদের প্রয়োজন পড়ে একটি ডিভাইসের। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট এর মধ্যে যেকোনটি হলে চলবে। তাছাড়া বর্তমানে অনেক ধরনের স্মার্ট টেলিভিশনও রয়েছে যেগুলো দিয়ে ইন্টারনেটে প্রবেশ করা সম্ভবকর।
IPS বা Internet Service Provider বলতে কি বুঝায় ?
সহজ করে যদি বলি তাহলে - যেকোন সিম কোম্পানির ইন্টারনেট ডাটা সংগ্রহ করা। বাংলাদেশ অনেক ধরনের সিম কোম্পানি রয়েছে যেমন, গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি,টেলিটক ইত্যাদি। এই কোম্পানি গুলো Telecommunication Service প্রদানের সাথে সাথে আমাদেরকে Internet Service Provide করে থাকে। তো তাদের কাছে থেকে IPS গ্রহণ করা।
কোন ধরনের ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন বা ব্রাউজার ব্যবহার করব ?
আপনি যেকোন ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো ও শক্তিশালি সার্চ ইঞ্জিন হলো - Google । তাছাড়া Yahoo,Bing এই সার্চ ইঞ্জিনও ব্যবহার করতে পারেন। আর ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন - গুগল ক্রোম, ওপেরা, মজিলা ফায়ারফক্স,ইন্টারনেট এক্সপ্রোরার ইত্যাদি।
আরও পড়ুন..
ইন্টারনেট কী এবং এর সুফল কী?ইন্টারনেটের আবিস্কারক ও ইতিহাস !
ইন্টারনেট এককভাবে যে তৈরি হয়েছে তা কিন্তু না। গবেষণার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি এই কাজের সাথে জড়িয়েছেন। তবে ভিনটন জি কার্ফ'কে ইন্টারনেটের জনক বলা হয়।
বিশ্বে প্রথম ইন্টারনেট সেবা চালু হয় - ১৯৬৯ সালে। অনেকে বলেন যে, আমেরিকান সেনাবাহিনী যুদ্ধে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য ARPANET নামক একটি নেটওয়ার্ক চালু করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণা ও পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে আজকের ইন্টারনেটের রূপ ধারণ করে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা কি ?
বর্তমান এই যুগে ইন্টারনেটের সুবিধায় কি কি হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। ইন্টারনেট ছাড়া এই যুগ অচল থাকবে । ইন্টারনেটের সুবাধে আমরা আজ কঠিন থেকে কঠিন কাজ মুহূর্তে করতে পারছি।
মনে করেন, আপনি ঢাকায় বসবাস করেন। এখন হঠাৎ করে এক ঘন্টার মধ্যে কোন একটি জরুরি কাগজ সিলেটে পাঠানোর দরকার। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব বাসে গেলে প্রায় ৬ ঘন্টা। আর ট্রেনে গেলে ৭-৮ তো লাগবেই। তাছাড়া সময়, টাকা ও পরিশ্রম প্রয়োজন। তারপরেও আপনি এক ঘন্টার মধ্যে সিলেটে যেতে পারবেন না। কিন্তু ইন্টারনেটের সুবাদে আপনি ঘরে বসে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে আপনার প্রয়োজনীয় সকল কাগজের তথ্য সিলেটে পাঠাতে পারেন। শুধু সিলেট না পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে পাঠাতে পারবেন। ইন্টারনেট ব্যবহারে এরকম আরও হাজারো সুবিধা পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারে আরো কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন,ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনার প্রিয়জনের সাথে অডিও বা ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোন বিষয় সম্পর্কে জানতে জানতে পারেন।
আপনার পছন্দের সিনেমা,নাটক, গান ইত্যাদি দেখতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-মেইল সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্যাক্স সুবিধা পেতে পারেন।
ঘরে বসে থেকে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পারেন।
রাত বলে কিংবা দিন। যেকোন সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে বড় বড় ডাক্তারদের কাছে থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে টাকা আদান প্রদান করতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে যেকোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।
ইন্টারনেটে কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনি আরো অসংখ্য কাজ কোন ধরনের সমস্যা ছাড়া সম্পন্ন করতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধা কি ?
প্রত্যেকটা বিষয়ের সুবিধা যেমন থাকে তেমনি অসুবিধাও থাকে। ইন্টারনেট ব্যবহারে সুবিধা যেমন অঢেল তেমনি কিছু অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। যেমন,ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে অতিরিক্ত রেডিয়েশন সৃষ্টি হয়। যা আমাদের পরিবেশ ও জীবের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ইন্টারনেট অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আমাদের শরিরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ইন্টারনেট আসক্তির ফলে যেকোন মানুষের জীবনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
পড়ালেখা, কাজ-কর্মের প্রতি মনযোগ উঠে যায়।
অনলাইনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা পণ্যের দাম নেয়ার পর পণ্য দেয়না বা পণ্য দিলেও তা কাঙ্খিত মান থাকে না।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজে হ্যাক করে যে কারো তথ্য জমা করা যায়।
যেকোন সময় ম্যালওয়্যার বা বিভিন্ন ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের মধ্যে আক্রমণ করতে পারে।
উপরোক্ত অসুবিধে ছাড়া আরও কিছু অসুবিধা দেখা যায়। সকল জিনিসের সুবিধা অসুবিধা থাকে ঠিক তেমনি ইন্টারনেটেরও সুবিধার সাথে অসুবিধে রয়েছে। তবে এই অসুবিধা আমরা চাইলে দূর করতে পারি। আমাদের সামান্য সাবধানতা ইন্টারনেটের অসুবিধা দূর করতে পারে।
সর্বপরি ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে পুরোই বদলে দিয়েছে। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারে আমরা আমাদের জীবনকে অনন্য এক উচ্চতায় নিতে পারি।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। যদি আপনাদের উপকারে আসে তবেই আমাদের স্বার্থকতা।
0 মন্তব্যসমূহ